• বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

কৃষকের সর্বনাশ : আলু চাষিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন

কৃষকের সর্বনাশ : আলু চাষিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন

  আন্দোলন প্রতিবেদন  

বৃহঃস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫  |  অনলাইন সংস্করণ

নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। বাজারে এখন শাকসব্জি কেজি প্রতি দাম ৮০-১০০ টাকার বেশি। কিন্তু অবাক করার বিষয়, বাজারে এখন প্রতি কেজি আলুর মূল্য মাত্র ১৫/২০ টাকা। শহুরে শ্রমিক-নিম্নবিত্তরা হয়তো একটু যেন খুশি, যাক বাবা আলুর দামটাতো কম আছে!   কিন্তু খবরে প্রকাশ নওগাঁর আলু চাষিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কারণ তাদের আলু চাষে এবং হিমাগারে রাখা পর্যন্ত খরচ পড়েছে কেজি প্রতি ২৫-২৬ টাকা। কিন্তু এখন হিমাগার থেকে আলু কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৫ টাকায়। এদিকে হিমাগারে আলু রাখার মেয়াদও প্রায় শেষ। এখন আলু চাষিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই দিশাহারা আলু চাষিরা শুধু পালিয়ে বেড়াবেন নাকি কেউ কেউ আত্মহত্যা করবেন তা এখন বলা না গেলেও পত্রিকায় প্রকাশ এ বছরের ২৬ মার্চ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ৯ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। তার অধিকাংশই কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে এবং ঋণের জালের ফাঁদে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন।

কৃষি-খরচ মেটাতে গিয়ে কৃষকদের গ্রাম্য মহাজন ও এনজিওদের কাছ থেকে ঋণ করতে হয়। সার, বীজ, কীটনাশক অর্থাৎ চাষের উপকরণ কিনতে হয় চড়ামূল্যে। এনজিও, মহাজনদের বেঁধে দেয়া সময় মতো ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে নেমে আসে নিপীড়নের খড়গ।  রাজশাহীর মোহনপুরে এক কৃষক এনজিও থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পানের বরজ করেছিলেন। কিন্তু এ বছরে পানের দাম না পেয়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না। প্রতিদিন এনজিও লোকেরা কিস্তির জন্য চাপ দিতেন। ঋণের চাপে পড়ে ঐ কৃষক পানের বরজেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিটি কৃষকের আত্মহত্যার পেছনে এমন একটি করে গল্প আছে।

কৃষক এবং কৃষিতে সরকারি ভতুর্কী নামমাত্র। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাজেটও স্বৈরাচার/ফ্যাসিবাদী সরকারের অনুরূপ। অর্থ উপদেষ্টা গত অর্থবছরে ভতুর্কী ১৭ হাজার কোটি টাকাই বজায় রেখেছেন। কৃষি খাতে মোট ঋণের মাত্র ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ যায় কৃষকদের হাতে। বিভিন্ন সংস্থার জরিপ বলছে এনজিও, আত্মীয়স্বজন, বেসরকারি ব্যাংক, মহাজনী ব্যবসায়ী সহ বেসরকারি উৎস থেকে কৃষক ৮১ শতাংশের বেশি ঋণ করে থাকেন। এসব ঋণের সুদ ১৯ থেকে ৬৩ শতাংশ। আর সরকারের কৃষি ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদে কৃষি ঋণ দেয়, তার পরিমাণ মাত্র ৬ শতাংশ।

এছাড়া বাংলাদেশে প্রতিটি সেবার ক্ষেত্রে ঘুস বাণিজ্য রমরমা। কৃষি ব্যাংক তার থেকে ব্যতিক্রম নয়। ৮০ শতাংশ সারসহ কৃষি উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কৃষিকে বিদেশ নির্ভর করে তুলছে সাম্রাজ্যবাদ ও শাসকশ্রেণি। তা ছাড়া ডিলারদের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রাখে। ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যের ৩০-৫০ শতাংশ বেশি মূল্যে কৃষি উপকরণ ক্রয় করতে হয়। হিমাগারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ, আলু, শাক-সব্জি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। ফড়িয়া মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্মেও কৃষকদের কৃষিপণ্য লোকসানে বিক্রি করতে হয়।  সরকার আবারো সারের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। গত আগস্ট মাসে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের কথা মতো সারের দাম বাড়াবে সরকার।

বিদ্যমান রাষ্টব্যবস্থা অক্ষুন্ন রেখে কৃষি ও কৃষকের সমস্যা সমধান হবার নয়। কৃষককে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে বিভিন্ন নিপীড়িত শ্রেণি-পেশার জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর ও আধ-সামন্ততান্ত্রিক কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। কৃষি-বিপ্লবের জন্য কৃষকসহ সাধারণ জনগণের রাষ্টক্ষমতা দখলের বিপ্লবী সংগ্রামকে জোরদার করতে হবে।

কৃষকের সর্বনাশ : আলু চাষিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন

 আন্দোলন প্রতিবেদন 
বৃহঃস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫  |  অনলাইন সংস্করণ

নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। বাজারে এখন শাকসব্জি কেজি প্রতি দাম ৮০-১০০ টাকার বেশি। কিন্তু অবাক করার বিষয়, বাজারে এখন প্রতি কেজি আলুর মূল্য মাত্র ১৫/২০ টাকা। শহুরে শ্রমিক-নিম্নবিত্তরা হয়তো একটু যেন খুশি, যাক বাবা আলুর দামটাতো কম আছে!   কিন্তু খবরে প্রকাশ নওগাঁর আলু চাষিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কারণ তাদের আলু চাষে এবং হিমাগারে রাখা পর্যন্ত খরচ পড়েছে কেজি প্রতি ২৫-২৬ টাকা। কিন্তু এখন হিমাগার থেকে আলু কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৫ টাকায়। এদিকে হিমাগারে আলু রাখার মেয়াদও প্রায় শেষ। এখন আলু চাষিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই দিশাহারা আলু চাষিরা শুধু পালিয়ে বেড়াবেন নাকি কেউ কেউ আত্মহত্যা করবেন তা এখন বলা না গেলেও পত্রিকায় প্রকাশ এ বছরের ২৬ মার্চ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ৯ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। তার অধিকাংশই কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে এবং ঋণের জালের ফাঁদে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন।

কৃষি-খরচ মেটাতে গিয়ে কৃষকদের গ্রাম্য মহাজন ও এনজিওদের কাছ থেকে ঋণ করতে হয়। সার, বীজ, কীটনাশক অর্থাৎ চাষের উপকরণ কিনতে হয় চড়ামূল্যে। এনজিও, মহাজনদের বেঁধে দেয়া সময় মতো ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে নেমে আসে নিপীড়নের খড়গ।  রাজশাহীর মোহনপুরে এক কৃষক এনজিও থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পানের বরজ করেছিলেন। কিন্তু এ বছরে পানের দাম না পেয়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারছিলেন না। প্রতিদিন এনজিও লোকেরা কিস্তির জন্য চাপ দিতেন। ঋণের চাপে পড়ে ঐ কৃষক পানের বরজেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিটি কৃষকের আত্মহত্যার পেছনে এমন একটি করে গল্প আছে।

কৃষক এবং কৃষিতে সরকারি ভতুর্কী নামমাত্র। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাজেটও স্বৈরাচার/ফ্যাসিবাদী সরকারের অনুরূপ। অর্থ উপদেষ্টা গত অর্থবছরে ভতুর্কী ১৭ হাজার কোটি টাকাই বজায় রেখেছেন। কৃষি খাতে মোট ঋণের মাত্র ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ যায় কৃষকদের হাতে। বিভিন্ন সংস্থার জরিপ বলছে এনজিও, আত্মীয়স্বজন, বেসরকারি ব্যাংক, মহাজনী ব্যবসায়ী সহ বেসরকারি উৎস থেকে কৃষক ৮১ শতাংশের বেশি ঋণ করে থাকেন। এসব ঋণের সুদ ১৯ থেকে ৬৩ শতাংশ। আর সরকারের কৃষি ব্যাংক ৯ শতাংশ সুদে কৃষি ঋণ দেয়, তার পরিমাণ মাত্র ৬ শতাংশ।

এছাড়া বাংলাদেশে প্রতিটি সেবার ক্ষেত্রে ঘুস বাণিজ্য রমরমা। কৃষি ব্যাংক তার থেকে ব্যতিক্রম নয়। ৮০ শতাংশ সারসহ কৃষি উপকরণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কৃষিকে বিদেশ নির্ভর করে তুলছে সাম্রাজ্যবাদ ও শাসকশ্রেণি। তা ছাড়া ডিলারদের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রাখে। ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যের ৩০-৫০ শতাংশ বেশি মূল্যে কৃষি উপকরণ ক্রয় করতে হয়। হিমাগারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ, আলু, শাক-সব্জি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। ফড়িয়া মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্মেও কৃষকদের কৃষিপণ্য লোকসানে বিক্রি করতে হয়।  সরকার আবারো সারের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে। গত আগস্ট মাসে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের কথা মতো সারের দাম বাড়াবে সরকার।

বিদ্যমান রাষ্টব্যবস্থা অক্ষুন্ন রেখে কৃষি ও কৃষকের সমস্যা সমধান হবার নয়। কৃষককে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে বিভিন্ন নিপীড়িত শ্রেণি-পেশার জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর ও আধ-সামন্ততান্ত্রিক কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। কৃষি-বিপ্লবের জন্য কৃষকসহ সাধারণ জনগণের রাষ্টক্ষমতা দখলের বিপ্লবী সংগ্রামকে জোরদার করতে হবে।

আরও খবর
 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র